বাজেট ঘোষণার ঠিক আগে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরে তিন জাহাজ থেকে খালাস হচ্ছে ৩ হাজার ১৮৪ গাড়ি। গাড়ি দ্রুত খালাসের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠিও দিয়েছে পুরোনো গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠন বারভিডা। আজ বুধবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে খালাস করা গাড়ির জন্য পুরোনো হারে শুল্ক দিতে হবে।
কাল বৃহস্পতিবার আগামী অর্থবছরের নতুন বাজেট পেশ হবে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের নতুন বাজেটে যদি গাড়ির অবচয় সুবিধা কমিয়ে শুল্ক কর বাড়ানো হয়, তাহলেও এই গাড়িগুলোর জন্য বাড়তি শুল্ক কর প্রযোজ্য হবে না। এর ঠিক আগে বিপুলসংখ্যক গাড়ি আমদানি ও দ্রুত খালাসকে সন্দেহের চোখে দেখছেন অনেকে। প্রশ্ন উঠেছে গাড়ি ব্যবসায়ীরা কি আগাম তথ্য পেয়েছেন?
চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর সূত্র জানায়, গাড়িবাহী তিনটি জাহাজ থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ২ হাজার ১৮৯টি গাড়ি খালাস হয়েছে। আজ ‘ভাইকিং ওশেন’ জাহাজ থেকে আরও ৯৯৫টি গাড়ি খালাস হওয়ার কথা রয়েছে। জাহাজ কোম্পানির প্রতিনিধিরা জানান, তিন জাহাজ থেকে মোংলায় ১ হাজার ৪৭১টি এবং চট্টগ্রামে ১ হাজার ৭১৩টি নামানো হচ্ছে। এসব গাড়ির শুল্কায়ন বা বিল অব এন্ট্রি দাখিলের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। আজকের মধ্যেই সব গাড়ির শুল্কায়নের প্রাথমিক প্রক্রিয়া শেষ হবে। আমদানি করা গাড়ির মধ্যে সিংহভাগই টয়োটা ব্র্যান্ডের বিভিন্ন মডেলের পুরোনো গাড়ি। এ ছাড়া কিছুসংখ্যক হাইব্রিড গাড়িও আছে।
এ রকম সুবিধা নেওয়ার নজির আরও আছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরের বাজেটের আগের দিন রাতে চট্টগ্রাম বন্দরে ১ হাজার ৮১৮ গাড়ি অস্বাভাবিক দ্রুততায় শুল্কায়ন করা হয়েছিল। জাহাজ বন্দর জলসীমায় আসার পরই শুল্কায়নের প্রাথমিক কাজ শেষ করে আনা হয়। ওই বাজেটে গাড়ির শুল্ক কর বাড়ানো হয়েছিল। ফলে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে মাত্র এক জাহাজ গাড়িতেই সরকার প্রায় ৫৪ কোটি টাকা রাজস্ব হারায়। একইভাবে সে সময়ে মোংলা বন্দর দিয়ে বারভিডার তৎকালীন একজন নেতার একটি প্রতিষ্ঠান ২৫৫টি গাড়ি আমদানি করেছিল।
গত এক সপ্তাহে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরে আসা গাড়িবাহী জাহাজ বৃহস্পতিবার বাজেট ঘোষণার আগে খালাস করার জন্য বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা) চিঠিটি দেয় গত ৩০ মে। বারভিডার মহাসচিব মো. হাবিবুর রহমান চিঠি দেওয়ার কথা স্বীকার করে গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, বন্দরে জাহাজজটের কারণে যাতে গাড়িবাহী জাহাজগুলো বহির্নোঙরে অপেক্ষা করতে না হয়, সে জন্যই এই চিঠি দেওয়া হয়েছে। শুল্ক কর বাড়তে পারে এমন আশঙ্কায় একসঙ্গে এত গাড়ি আমদানি হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগামী বাজেটে গাড়ির শুল্ক কর বাড়লে যেমন সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনি শুল্ক কর কমলে আর্থিক ক্ষতিরও আশঙ্কা রয়েছে। প্রতিবছর বাজেটের আগে গাড়ি আমদানিকারকেরা শুল্ক কর বাড়ানো বা কমানো নিয়ে শঙ্কার মধ্যে থাকেন।
বাজেটের আগ মুহূর্তে আনা পণ্য কোন সময়ের শুল্কহারে শুল্কায়ন হবে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম মাহবুবুর রহমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, আইন অনুযায়ী যে তারিখে বিল অব এন্ট্রি দাখিল হবে সেই তারিখে বলবৎ থাকা শুল্কহারে ওই পণ্য শুল্কায়ন হবে। এবার রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী, বাজেট ঘোষণার আগের দিন বুধবার বিকেল পাঁচটা থেকে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড (শুল্কায়নের সফটওয়্যার) বন্ধ করে দেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তা বন্ধ থাকবে। আগামী শুক্রবার থেকে নতুন বাজেটে নির্ধারিত শুল্কহারে তা শুল্কায়ন করা হবে।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গত তিন অর্থবছরে বাজেটের আগে জুন মাসে গাড়ি আমদানির তথ্যে দেখা যায়, ২০১৫ সালে ২৬৯টি, ২০১৬ সালে ৬৩৪টি এবং ২০১৭ সালে ১ হাজার ১২৬টি গাড়ি আমদানি হয়। এ হিসাবে এই অর্থবছরেই বাজেটের আগে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক গাড়ি আমদানি হয়েছে।